অনলাইন পেমেন্টের অংশীদার হবে ভিসা ও মাস্টারকার্ড
ভারতের বাজারে আমেরিকান কার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লেনদেন ধীর হয়েছে। লেনদেন বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়ে ভিসা ইনকরপোরেটেড ও মাস্টারকার্ড ইনকরপোরেটেড ভারতীয় বাজারের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে ওয়াশিংটন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। কেননা নয়াদিল্লি ব্যাংকগুলোকে দেশীয় লেনদেনমাধ্যম ব্যবহারে উৎসাহী করছে। স্থানীয় ডাটা স্টোরেজ রুলস মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে মাস্টারকার্ড, ডিসকভার ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও আমেরিকান এক্সপ্রেস কোম্পানি ভারতে রেগুলেটরি-সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছে। এসব কার্ড ব্যবহারে পেমেন্ট বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
নিউজ পোর্টাল দ্য মর্নিং কনটেক্সটের তথ্যমতে, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ভিসা ও মাস্টারকার্ডকে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন পেমেন্ট প্রটোকলের সুবিধা দিতে আগ্রহী। উভয় দেশের মধ্যে হয়তো সম্পর্ক উন্নয়নের সময় এসেছে। ভারতের বাজার কিছুটা শিশুদের সামনে মিষ্টান্নের দোকানের চাবি ঝুলানোর মতো। বড় বড় মল থেকে শুরু করে ফুটপাতের টঙের দোকান পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২৩ কোটি কিউআর কোড সংযুক্ত দোকান রয়েছে। কেনাকাটার বিল পেমেন্ট করতে এগুলো দেশীয় ব্যাংকমাধ্যম ব্যবহারের জন্য সেটআপ করা হয়েছে। ১৪০ কোটি মানুষের দেশটিতে বর্তমানে মাত্র ৭৩ লাখ পয়েন্ট অব সেল টার্মিনাল রয়েছে যেখানে লেনদেন হয় কার্ড সোয়াপ করে।
প্লাস্টিকের ও ব্যয়বহুল কার্ড রিডারের পরিবর্তে উদীয়মান বাজারটি অ্যাপভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেমের দিকে ঝুঁকছে। চীনের ব্যবসায়ীরা ক্রেতার ব্যবহূত আলিপে ও উইচ্যাট অ্যাপের কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট নিয়ে থাকেন। ভারতের পেটিম অ্যাপ ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য মূলধনের বোঝা আরো কমিয়ে দিয়েছে। গ্রাহকরা বিক্রেতার মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টের কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করেন। সফল পেমেন্টের পর ফোনের স্ক্রিনটি বিক্রেতাকে দেখান।
এক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য ব্যাংকে দ্রুত অর্থ ট্রান্সফারের জন্য কিউআর কোডভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম ভারতে এখন লেনদেনের একটি স্ট্যান্ডার্ড হয়ে উঠেছে। এটি ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (ইউপিআই) হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে ২০১৬ সালে শূন্য অবস্থা থেকে গত ডিসেম্বরে স্মার্টফোনভিত্তিক এই ইউপিআই সিস্টেমে প্রায় ১৩ লাখ কোটি রুপি বা ১৬ হাজার কোটি ডলার লেনদেন করেছে। এ অর্থের প্রায় ১০ লাখ কোটি রুপি কার্ড লেনদেনের মাধ্যমে এবং বাকি ৩ লাখ কোটি রুপি কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করা হয়েছে। ভারত সরকার ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা দিচ্ছে যাতে অনলাইন লেনদেনের জন্য গ্রাহকদের উৎসাহিত করা হয় এবং এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। ফুটপাতের দোকানিদের মতো পিছিয়ে পড়া ব্যবসায়ীদের জন্যও সহজ শর্তে ক্রেডিট কার্ড দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিচ্ছে দেশটির সরকার।
বড় বড় কার্ড নেটওয়ার্কের জন্য এ দ্রুতবর্ধনশীল বাজার উন্মোচনের মানে হলো ফিজিক্যাল কার্ডগুলোর ব্যবহার কমবে। সেই সঙ্গে ক্রেডিট সীমিত করে দেয়া হবে। এটি একটি বড় সমস্যা হতে পারে কেননা কিছু ক্রেতা তাদের নিজস্ব অর্থের পরিবর্তে কেনাকাটার জন্য ঋণ নিতে চাইবেন। এরই মধ্যে ইউপিআই প্রটোকলের নিয়ন্ত্রক ন্যাশনাল পেমেন্টস করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসিআই) রুপে অ্যাপের স্পন্সর করছে। আরবিআই সম্প্রতি রুপে ক্রেডিট কার্ডকে ইউপিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত করার অনুমতি দিয়েছে।
রুপে এরই মধ্যে ৬০ কোটিরও বেশি কার্ড ইস্যু করেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ডেভিড কার্ড সরঞ্জাম। তবে হঠাৎ করেই রুপে পেমেন্ট সিস্টেমের সুরক্ষিত আর্থিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠার সুযোগ নেই। দেশটিতে ভিসা ও মাস্টারকার্ডের পরিমাণ দেশের ক্রেডিট কার্ডের ৯০ শতাংশ। এ দ্বৈত অংশীদারত্ব ভারত সরকারকে উদ্বিগ্ন করছে। বিষয়টি নিয়ে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চলছে। শিগগিরই এর সমন্বয় হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই