ফের সংকটের মুখে চীনের করপোরেট খাত
চীনে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মতে, খুচরা ও আর্থিক পরিষেবার ব্যবসাগুলো কর্মী ঘাটতির কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অসুস্থতার কারণে অনেক কর্মী কাজ করতে না পারায় নির্মাতারা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
কানাডা-চায়না বিজনেস কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোয়াহ ফ্রেজার বলেন, খুচরা ও ভোক্তানির্ভর খাতগুলো সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। এমনিতেই তারা সীমিত কর্মী নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে আবার অসুস্থতার কারণে কিছু কর্মী কাজে না আসায় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। এজন্য বড় বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে বন্ধ রাখাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
চলতি মাসেই চীন হঠাৎ করে জিরো কভিড নীতি থেকে সরে আসে। পাশাপাশি প্রায় তিন বছর ধরে চালিয়ে আসা গণপরীক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। এ অবস্থায় নতুন শনাক্ত চিহ্নিত করার পদক্ষেপও থমকে গিয়েছে। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনা সংক্রমিত হয়ে মাত্র ৫ হাজার ২৪১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে সরকার। তবে কিছু অনুমান বলছে, বর্তমানে দেশটিতে দ্রুত কভিড সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে চীনের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমিত হতে পারে।
নোয়াহ ফ্রেজার বলেন, বড় শহরগুলোয় করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। অর্থাৎ ভাইরাসটি পুনরায় গতি পেয়েছে এবং আমরা সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত দেখতে যাচ্ছি। তাছাড়া সাম্প্রতিক সংক্রমণ শুরুর আগেই জিরো কভিড নীতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে বেশির ভাগ কভিডজনিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আগে নভেম্বরে চীনের শিল্পোৎপাদন ও খুচরা বিক্রির সূচক ছয় মাসের সর্বনিম্নে নেমেছিল। পরিষেবা খাতে দুর্বলতার মধ্যে গত মাসে খুচরা বিক্রি বছরওয়ারি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং গাড়ি উৎপাদন ৯ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। চীনের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রেনেসাঁস ইলেকট্রনিকস করপোরেশন কভিড সংক্রমণের কারণে গত শুক্রবার বেইজিংয়ের কারখানার উৎপাদন স্থগিত করেছে। তবে আগামী মঙ্গলবারই কারখানাটি পুনরায় চালু হবে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
চীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট জোয়ের্গ ওয়াটকে বলেন, কিছু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। চীন সীমান্ত বন্ধ করে বিচ্ছিন্ন থেকে সংক্রমণ ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু কর্মী বাহিনীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল। আপনাকে মূলত কর্মীদের জ্বর হওয়ার আগেই এটি ঠেকাতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
একটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহী বলেন, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কারখানায় সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে বিশেষ দক্ষদের রাখা নিয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হচ্ছে। যেমন ট্রাকচালকদের সমস্যা হলে কারখানায় পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, কারখানা থেকে গাড়িগুলো দোকানে নিয়ে যাওয়া যায় না এবং পুরো শিল্প চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভারী ট্রাক শিল্পে কর্মরত একজন জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক বলেন, ডিলারদের সঙ্গে যখন কথা বলছি, তারা হয় নিজেরা সংক্রমিত কিংবা অসুস্থ হওয়া পরিবারের সদস্যদের যত্ন নিচ্ছেন। ফলে লকডাউন না থাকলেও সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ছে এবং আপনি কোনোভাবেই স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন না।
বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে চীন। পাশাপাশি বৈশ্বিক ভোগ্যপণ্য কোম্পানির বিক্রিরও প্রধান চালক বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি। সুতরাং চীনে কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলে তার প্রভাব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা পুনরায় জটিলতায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই