শেয়ার কেনার সময় বাড়িয়েছে বেক্সিমকো সিনথেটিকস - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

শেয়ার কেনার সময় বাড়িয়েছে বেক্সিমকো সিনথেটিকস


শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুতির প্রক্রিয়ায় থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি বেক্সিমকো সিনথেটিকস লিমিটেড শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে শেয়ার কেনার বেঁধে দেয়া সময় বাড়িয়েছে কোম্পানিটি।


এর আগে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে শেয়ার কিনতে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে প্রয়োজনীয় কাগজ/ডকুমেন্ট দাখিল করতে বলেছিল। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে অনেক শেয়ারহোল্ডার আবেদন না করায় আগামী ৩০ মে পর্যন্ত শেয়ার কেনার সময় বাড়িয়েছে কোম্পানিটি। ডিএসই মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এই তথ্য জানিয়েছে বেক্সিমকো সিনথেটিকস।


সূত্র মতে, শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে প্রতি শেয়ার ১০ টাকা করে মোট ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৩টি শেয়ার কিনবে বেক্সিমকো সিনথেটিকস। যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৬৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সাধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে উল্লিখিত পরিমাণ শেয়ার রয়েছে। এই শেয়ার কিনতে কোম্পানিটিকে শেয়ারহোল্ডারদের ৫৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।


বেক্সিমকো সিনথেটিকস প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসার সময় প্রতি শেয়ার ১০ টাকা করে ইস্যু করেছিল। ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগে সর্বশেষ ৮ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ২ টাকা ৭৮ পয়সা। স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগের এক বছরে ভারিত গড় হারে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা। এর মধ্যে ১০ টাকা হচ্ছে সর্বোচ্চ দর এবং এই দরেই বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।


তালিকাচ্যুতির প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিনিয়োগকারী বাছাইয়ের জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। এই সময়ের মধ্যে যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে কোম্পানিটির শেয়ার ছিল তারাই শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। অবশ্য ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কোম্পানিটির সব সাধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীই তাদের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন।


শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুতির জন্য ২০২০ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে আবেদন করেছিল বেক্সিমকো সিনথেটিকস। কিন্তু তালিকাচ্যুতির সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এত দিন প্রক্রিয়াটি আটকে ছিল। এরপর বিএসইসির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ‘এক্সিট পরিকল্পনা’ করা হয়। এরই মধ্যে তালিকাচ্যুতির আবেদন গ্রহণ করে ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত রাখার জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেয়া হয়।


এরপর থেকেই দফায় দফায় কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত বছরের শেষের দিকে পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুতির জন আবারো আবেদন করে কোম্পানিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর তালিকাচ্যুতির আবেদন অনুমোদন করে বিএসইসি।


ড্রন টেক্সচারড ইয়ার্ন (ডিটিওআই) নামে এক ধরনের পলিয়েস্টার সুতা উৎপাদন ও বিক্রির জন্য কোম্পানিটি ১৯৯০ সালের ১৮ জুলাই ‘যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর’-এ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় বেক্সিমকো সিনথেটিকস। ১৯৯৩ সালের ৪ ও ৬ নভেম্বর যথাক্রমে ডিএসই ও সিএসই তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি।


প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোম্পানির কার্যক্রম ছিল একক পণ্য অর্থাৎ ডিটিওয়াই ঘিরে। তখন যেহেতু ডিটিওয়াইয়ের ব্যাপক চাহিদা ছিল ফলে কোম্পানিটিও ভালো মুনাফা অর্জন করে এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে নিয়মিত ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে কোম্পানি কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি।


২০১৩ সাল থেকে কোম্পানিটি খুবই কঠিন সময় পার করতে থাকে। ডিটিওয়াই আমদানির ওপর সরকার শুল্ক হ্রাস করায় বারবার কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। শুল্ক হ্রাসের কারণে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত সস্তা ডিটিওয়াই বাজার দখল করে। ফলে বাংলাদেশে এ ধরনের সুতা উৎপাদন করে মুনাফা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়ে। সর্বোচ্চ চেষ্টা স?ত্ত্বেও কোম্পানি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন বা মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয় তাদের।


এই কারণে লেনদেন বন্ধের আগের কয়েক বছর ধরে কোম্পানিটির শেয়ার অভিহিত মূল্যের চেয়েও কম দরে কেনাবেচা হয়। পরবর্তী? সময়ে কোম্পানিটি উৎপাদন কার্যক্রম ও কারখানা বন্ধে বাধ্য হয়। আইনানুযায়ী সব দেনা পরিশোধের পর সব শ্রমিক এবং বেশির ভাগ কর্মকর্তা ও স্টাফকে ছাঁটাই করে তারা।


কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৮৫ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ শেষে কোম্পনিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ২৫ পয়সায়।


৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি বেক্সিমকো সিনথেটিকস। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯ টাকা ২০ পয়সা, আগের অর্থবছর শেষে যা ছিল ৩ টাকা ৪৬ পয়সা। ৩০ জুন প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়ায় ১ টাকা ৪০ পয়সা, যেখানে আগের অর্থবছর শেষে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৪ টাকা ১৩ পয়সা।


৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি কোম্পানিটি। আলোচ্য অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৩৮ পয়সা। আগের অর্থবছর শেষে যা ছিল ৯ টাকা ২০ পয়সা। ৩০ জুন ২০২১ শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়ায় ২ টাকা ৭৮ পয়সায়। যেখানে আগের অর্থবছর শেষে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৪ টাকা ১৩ পয়সা।


৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ অর্থবছরেরও জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি বেক্সিমকো সিনথেটিকস। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৯ টাকা ২০ পয়সা। আগের অর্থবছর শেষে যা ছিল ৩ টাকা ৪৬ পয়সা। ৩০ জুন ২০২০ শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়ায় ১ টাকা ৪০ পয়সা, যেখানে আগের অর্থবছর শেষে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৪ টাকা ১৩ পয়সা।

কোন মন্তব্য নেই