অ্যাননটেক্স থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

অ্যাননটেক্স থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক


ব্যাংক খাতের বৃহৎ ঋণ কেলেঙ্কারি জনতা ব্যাংকের অ্যাননটেক্সের। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকটি; যার বেশিরভাগই আদায় করতে পারছে না। ফলে বিপদে ব্যাংক। কিন্তু তারপরও বিতর্কিত এ গ্রæপটিকে আরও সুবিধা দিতে চায় জনতা ব্যাংক। পুনরায় করে ঋণ পুনঃতফসিলে আবেদন। তবে নীতিবহিভূত হওয়ায় তা বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এর আগে একই সুবিধা দেয়া হয়েছিল গ্রুপটিকে।


জানা গেছে, ঋণ জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অ্যাননটেক্স গ্রæপের ২২টি প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা এখন সুদসহ বেড়ে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যার পুরোটাই এখন খেলাপি।


অ্যাননটেক্স গ্রæপের ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্প্র্রতি ৭ প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল এবং ২১৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের আবেদন করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে অ্যাননটেক্স গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য উঠে আসে। ফলে গ্রæপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন বিধিসম্মত না হওয়ায় তাতে সায় দেয়নি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। তা বাতিল করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


যদিও চলতি বছরেই অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ পুনঃতফসিলে অনাপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শর্ত সাপেক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় এই ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়।


৫ জানুয়ারি জনতা ব্যাংকের উদ্দেশ্যে ইস্যু করা একটি চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, লামিসা স্পিনিং লিমিটেড, জারা ডেনিম লিমিটেড, সিমরান কম্পোজিট লিমিটেড, গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেডসহ অ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ১৭টি গ্রাহক প্রতিষ্ঠান এর ঋণস্থিতি তিন হাজার পাঁচশো চৌষট্টি দশমিক ছয় তিন কোটি (৩৫৬৪.৬৩ কোটি) টাকার ঋণসমূহ পুনঃতফসিলকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ডাউন পেমেন্ট বাবদ আদায়কৃত ৭১.৬৪ কোটি সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবসমূহে জমাকরণের পর পুনঃতফসিল সুবিধাটি কার্যকর হবে। এর আগে ২০১৯ সালে পুনঃতফসিল করা হয় দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।


প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ জারি করা হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণবহিভর্‚ত (রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি) কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেসব উদ্যোক্তা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না কেবল তাদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেয়া যাবে। তবে এর বাইরে অন্য কোনো কারণে খেলাপি হলে তিনি আর এই সুবিধা পাবেন না। অর্থাৎ জাল-জালিয়াতি করে ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে তিনি এই নীতিমালার আওতায় তা নবায়ন করার সুযোগ নেই। এ কারণে তা বাতিল করা হয়েছে।


কেন বারবার অ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দিতে চায় জনতা ব্যাংকÑবিষয়টি সম্পর্কে জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


পরে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অ্যাননটেক্সের কিছু ঋণ পুনঃতফসিলে আবেদন করেছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না, আমার মিটিং আছে’Ñএই বলে তিনি কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


এদিকে অ্যাননটেক্স গ্রুপের ৫ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বর্তমান এমডি মো. আবদুছ ছালাম আজাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে দুদক। করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক পদে থাকার সময় তিনি আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গ্রুপটির ঋণের অনুমোদন, বিতরণ এবং পরিবীক্ষণে সহায়তা করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে এসব বিষয় ওঠে এসেছে।


অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি: ইউনুস বাদল জনতা ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের নামে পাঁচ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা বের করে নেন। ওই টাকার মধ্যে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তিনি একটি ‘ডামি ফ্যাক্টরি’ করেন। বাকি টাকা দেশের বাইরে পাচার করে দেন। একটি দেশে তিনি ‘সিসার’ বারও দেন। ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে তার বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি প্রচার করেন। অথচ তিনি প্রায় বেশিরভাগ অর্থ পাচার করে দিয়ে বেশ ভালোই আছেন। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির নামেও অভিনব জালিয়াতি করেছে গ্রুপটি।


জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কোম্পানি খুলে জনতা ব্যাংক থেকে এলসির (ঋণপত্র) টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস বাদল নিজেই। এর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির কোনো সম্পর্ক নেই। এ জালিয়াতিতে সরাসরি সহায়তা করেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুছ ছালাম আজাদ। এ-সংক্রান্ত পরিদর্শন রিপোর্টেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি ওই রিপোর্টটি দুদকেও পাঠানো হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।


অ্যাননটেক্স গ্রুপের মালিক ইউনুস বাদল দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোন মন্তব্য নেই