ন্যাটোর কঠোর সমালোচনা পোপ ফ্রান্সিসের
তার কথায় ‘রাশিয়ার দোরগোড়ায় ন্যাটোর নিরন্তর ঘেউ ঘেউ’ দেশটিকে ইউক্রেন অভিযানে প্ররোচিত করে থাকতে পারে।’ মঙ্গলবার (০৩ ম) ইতালির দৈনিক ‘কোরিয়ের ডেলা সেরা’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন পোপ।
সাক্ষাৎকারে পশ্চিমা দেশগুলোর ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহেরও সমালোচনা করেন পোপ ফ্রান্সিস। বলেন, ইউক্রেনকে কেন তাদের অস্ত্র সরবরাহ করতে হবে তা ঠিক বুঝে আসে না। একই সঙ্গে রুশ সামরিক অভিযানের সাফাই গাওয়ায় রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চের নেতাকেও একহাত নিয়েছেন পোপ। বলেন, মস্কোর প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল ‘নিজেকে পুতিনের সেবকে পরিণত করতে পারেন না।’
ন্যাটোর সমালোচনার পাশাপাশি যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, তিনি মস্কো সফরে যেতে চান। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সরাসরি পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। পোপ আরও জানান, এজন্য পুতিনকে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি। কিন্তু এখনও তার কোনো জবাব পাননি।
সাক্ষাৎকারে পোপ বলেন, বিরোধের প্রায় ২০ দিনের মধ্যে তিনি মস্কো যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে পুতিনকে একটি বার্তা পাঠান। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি এবং আমরা এখনও এর ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছি। যদিও আমি মনে করছি, পুতিন এই সময়ে এই বৈঠক করতে পারবেন না এবং চান না।’
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে দেশটির ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে দেখছেন পোপ। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, দেশটি কোনো ঘটনায় হামলায় প্ররোচিত হয়েছে কি না, তবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ন্যাটোর উপস্থিতি সম্ভবত সেই সুযোগ করে দিয়েছে।’
মঙ্গলবার ক্রেমলিনের আর্চেঞ্জেল ক্যাথেড্রালে ধর্মীয় ভাষণে প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল দাবি করেন, রাশিয়া কখনো অন্য কোনো দেশে হামলা চালায়নি। তাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলেছে, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাই না। রাশিয়া কখনো কাউকে আক্রমণ করেনি।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের পর থেকেই ইউক্রেনীয়দের দুর্দশায় দুঃখ প্রকাশ করে আসছেন পোপ। তবে সামরিক অভিযানের জন্য সরাসরি রাশিয়াকে কখনই নিন্দা জানাননি তিনি।ভ্যাটিকানের ঐতিহ্যগত নিরপেক্ষতা এবং রুশ অর্থোডক্স চার্চের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করার বিষয়টি এতে প্রতিফলিত হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে ভ্যাটিকানকে একই কাতারে দাঁড় করাতে অনিচ্ছুক তিনি।
সাক্ষাৎকারে পোপ বলেন, ‘ইউক্রেনের সংঘাত অন্য দেশগুলো সৃষ্টি করেছে।’ তবে তিনি কোনো দেশের নাম বলেননি। এ যুদ্ধের সঙ্গে অন্যান্য সংঘাতকে যুক্ত করে পোপ বলেন, আন্তর্জাতিক স্বার্থেই প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে—‘সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, আফ্রিকায় একের পর এক যুদ্ধে।’
ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা বলেন, ‘আমি জানি না কী বলব, ইউক্রেনীয়দের অস্ত্র সরবরাহ সঠিক কি না, সে কথা বলা থেকে আমি বিরত আছি।’ পোপ বলেন, ‘যেটা স্পষ্ট তা হলো, এই ভূমিতে অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এ জন্যই যুদ্ধগুলো হয়—আমরা যে অস্ত্রগুলো বানিয়েছি সেগুলো পরীক্ষা করতে।’
কোন মন্তব্য নেই