পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি




প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ কারণে বিগত ১০ বছরে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে।


আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তাহব্যাপী ‘রোড শো’ শুরু হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় নিউ ইয়র্কের ম্যান হাটনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল বার্কলের বলরুমে এই রোড শো’র উদ্বোধনী পর্বে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি ফেসবুক ও ইউটিউবে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।


অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সম্ভাবনাময় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে। রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা, বিনিয়োগের অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে। সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণে এই সম্ভাবনা।

এর মধ্যে রয়েছে-বিশাল বাজার, শ্রমশক্তি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, স্থিতিশীল গণতন্ত্র ও সরকারের নীতিসহায়তা। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগের জন্য প্রবাসী ও বিদেশি উদ্যোক্তারা, বিশেষ করে আমেরিকান প্রবাসীদের আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশকে পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে রাখতে পারেন।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমি দেখেছি ইউনিয়ন পর্যায়ে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বিউটি পার্লার, জিমনেসিয়াম এবং ইভেন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমান জনসংখ্যার বিবেচনায় বিশ্বের একটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। এ ছাড়াও বাংলাদেশে বিশাল শ্রমবাজার রয়েছে। বেশির ভাগ জনশক্তি তরুণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনসংখ্যার বোনাসকল চলছে। বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল গণতন্ত্র জরুরি। বাংলাদেশে সেটা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি নেই। নিম্ন পর্যায়ে দুর্নীতির কথা বলা হলেও ডিজিটালাইজেশনের কারণে তা কমে যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা উচিত।


অনুষ্ঠানে একটি সেশন ছিল প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। এতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সালমান এফ রহমান।


ওই অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামীতে আইটির হাব হবে বাংলাদেশে।


বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এখানে লাভ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রচুর সম্ভাবনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাই আপনারাও এই উন্নয়নে সঙ্গী হোন।


তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর জিডিপিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভিয়েতনামসহ আরও অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে। গত এক দশক ধরে আমাদের গড় জিডিপি গ্রোথ ৬.৮ শতাংশ।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে গত ১২ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কিছুতেই অসাধারণ উন্নতি করেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অনেক কারণ রয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম। আমাদের খুব ভালো শ্রমিক রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে শিক্ষার হারও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অপর দিকে শিক্ষিত ও আধাশিক্ষিত শ্রমশক্তি রয়েছে, যারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য উৎপাদনে খরচ অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে।


তিনি বলেন, আমাদের পলিসিসহ সব কিছু ব্যবসাবান্ধব। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাসহ সবার চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসছে। তারা সবাই ব্যবসায়ীদের ও ব্যবসায়ের পক্ষে কাজ করছেন। এটি ব্যবসায়ের জন্য একটি ভালো দিক।


শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্বের সবপ্রান্তের মানুষকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। আমাদের ব্যবসাবান্ধব সরকার, পলিসি এবং নিয়মকানুনসহ সব কিছুই ব্যবসার পক্ষে। এ ছাড়া গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়েছে। যার ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি কমেছে। এখন কোনো বিদ্যুৎ সমস্য নেই। এ ছাড়া কারখানার গ্যাস চাহিদা মেটানো হয়েছে।


তিনি বলেন, এফডিআইতে সরকার অনেক ধরনের সুবিধা দিচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের।

গত দশ বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হাইটেক পার্কে ২২ শতাংশ ট্যাক্স কমানো হয়েছে। হাইটেক পার্কে তাদের ৮০ শতাংশ ভ্যাট ইউটিলিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ইক্যুইটি সীমাবদ্ধতা রাখা হয়নি। তাদের জন্য প্রথম বছর ৫০ শতাংশ ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এক্সপোর্ট অরিয়েনটেড রেভিনিউর জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক দিচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের প্রচুর লাভ দেয়ার চেষ্টা করে। এর জন্য বাংলাদেশ পুঁজিবাজার অনেক ভালো নিয়ম করেছে। যার ফলাফল পুঁজিবাজারে ইতিমধ্যে দেখা গেছে। হংকংয়ের ফ্রন্টিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চলতি বছরের তৃতীয়প্রান্তিকে বাংলাদেশ এশিয়ার সেরা পুঁজিবাজারে উঠে এসেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রেসিডেন্ট লরেন্স হেনরি সামার্স, বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কামরুল আনাম খান। প্রোগ্রামে স্পন্সর হিসাবে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক, নগদ এবং ওয়ালটন।

এই রোড শো আয়োজনের অন্যতম স্পন্সর বাংলাদেশি মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ড ওয়ালটন। বড় পর্দার ডিসপ্লে স্ক্রিন, এক্স স্ট্যান্ড, ব্যানার ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে ওয়ালটন ডিসপ্লে সেন্টার। রয়েছে বিনিয়োগকারীদের জন্য মিটিং স্পেস। ভিডিও স্ক্রিনে ওয়ালটনের উৎপাদন ও মার্কেটিংয়ের ওপর নির্মিত ডিজিটাল ডকুমেন্টরি প্রদর্শিত হবে। আগ্রহীদের ওয়ালটন সম্পর্কে ধারণা দিতে থাকছেন দক্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা বিনিয়োগকারী এবং দর্শনার্থীদের ওয়ালটনের ভিশন এবং মিশন সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেবেন।


কোন মন্তব্য নেই