ভাল ফটোগ্রাফার হবার ৭ উপায়
বলা হয় অনুশীলনই সফলতার চাবিকাঠি। অন্যান্য কাজের মত ফটোগ্রাফিতেও এই আপ্তবাক্য কেবল সত্যই নয়, বরং বলা চলে মূলনীতি। তবে অনুশীলন ঠিক কোন কোন বিষয়ের ভিত্তিতে করতে হবে, সেটি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন ভাল ফটোগ্রাফার হতে চাইলে যেসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে, ঠিক সেগুলোই প্রতিদিনের অনুশীলনে স্থান পাবে। একজন আদর্শ ফটোগ্রাফার হতে চাইলে অবশ্য পালনীয় সাতটি দৈনিক অনুশীলন রায়ান্স নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
১. স্পট মিটার
আধুনিক যুগের ডিএসএলআর ক্যামেরায় মিটারিং সিস্টেমে প্রভূত উন্নয়ন ঘটিয়েছে। ফলে পরিপার্শ্ব অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিটার সেট হয়ে যায় ক্যামেরায়। মাঝারি এক্সপোজারে ভাল মিটারিং করলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মিটারিংয়ে ঘাটতি থেকেই যায়। আর একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার যেহেতু তার চিন্তার মর্জিতে ছবি তুলবেন, তাই তিনি নিজের ইচ্ছেমত মিটারিং কাস্টমাইজ করে নিতে চাইবেন।
তাছাড়া কম বা বেশি আলোয় শতভাগ পছন্দসই মিটারিং পাওয়া সম্ভব না। তাই পরিস্থিতির বিবেচনায় একজন দক্ষ ফটোগ্রাফারকে দ্রুত মিটারিং করিয়ে নিতে প্রয়োজন প্রচুর অনুশীলন। যাতে যে কোন দৃশ্য দেখা মাত্র ফ্রেমের টোন রেঞ্জ তার কল্পনায় চলে আসে। অনেক সময় অটো প্রযুক্তি ফটোগ্রাফারের পছন্দসই মিটারিং নেবার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, সেক্ষেত্রে ক্যামেরার এএফ লক কাজে লাগানো যেতে পারে। সঠিক এক্সপোজারে লাইট, ফোকাস, ডেপথ সংযোগে শট নিতে এএফ লক ব্যবহারের বিকল্প নেই।
আদর্শ স্পট মিটারিং সিস্টেমে দৃশ্যের খুব সূক্ষ্ম পরিমাপ চলে যাতে এক্সপোজার সেটিং সেই অনুপাতে পরিবর্তিত হয়। একইসাথে স্পটের পজিশনিং নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে ফটোগ্রাফারকে। দৃশ্যকে সামনে রেখে কল্পনায় তার শুট নিয়ে রিড নিয়ে ফেলতে বেশি বেশি অনুশীলনের বিকল্প নেই।
২. চেক করে নিন হিস্টোগ্রাম
ফটো এডিটিং সফটওয়্যার গুলোতে ছবির ব্রাইটনেস নির্দেশক যে গ্রাফ প্রদর্শন করে, ক্যামেরার ডিসপ্লেতেও ঠিক একই ধরণের ডিজিটাল গ্রাফ দেখায়।
কালো থেকে শুরু করে সাদায় এই স্কেল বাম থেকে ডানে ০ থেকে ২৫৫ সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়। হিস্টোগ্রামের প্রতিটি রেখার শীর্ষ এর পিক্সেলের ব্রাইটনেস সংখ্যা বোঝায় এবং সর্বোচ্চ শীর্ষটি বোঝায় এই ব্রাইটনেস সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পিক্সেলে রয়েছে। অর্থাৎ কালো ধরণের ছবির বাম শীর্ষ সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে উজ্জ্বল ছবির ডানপ্রান্ত
সর্বোচ্চ শীর্ষ প্রদর্শন করবে। সঠিক এক্সপোজ করা ছবির ক্ষেত্রে হিস্টোগ্রামের মাঝামাঝি পিক্সেলে শীর্ষ প্রদর্শন করবে।
প্রতিটি ছবি তোলার পর এর হিস্টোগ্রাম চেক করলে ছবির ব্রাইটনেস সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধি পায়। ছবি তোলার ক্ষেত্রে এই গ্রাফ ক্রমাগতভাবে অনুসরণ করে চললে যেকোন আলোয় ছবি তোলার ক্ষেত্রে এক্সপোজার ও লাইট সম্পর্কে আগাম ধারণা জন্মে।
৩. সর্বদা সিঙ্গেল ফোকাস লেন্স ব্যবহার করুন
প্রাইম বা ফিক্সড ফোকাল লেন্থ লেন্স জুম ইন-আউটের অভ্যাস ছাড়াবে। স্থির অবস্থান থেকে সাবজেক্টের ছবি তোলার মেকি প্রথা ভেঙ্গে ভিউ ফাইন্ডারে সঠিক অ্যাঙ্গেলের ছবি তোলার জন্য কিছুটা আগুপিছু করে এক্সপোজার, লাইট, অ্যঙ্গেল, ফোকাস ও ডিসটেন্স ঠিক করার মাধ্যমে ছবির আসল পয়েন্ট খুঁজে বের করাই একজন আদর্শ ফটোগ্রাফারের সার্থকতা।
চবির সঠিক লাইট পেতে ক্রমাগত প্রাইম লেন্সে ছবি তুলতে থাকলে ফিক্সড ফোকাল লেন্থ সম্পর্কে ভাল অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব। এতে যেকোন পরিবেশে ভাল ফ্রেমিংয়ের ধারণা আপনাআপনিই চলে আসে।
৪. হোয়াইট ব্যালেন্স ঠিক রাখুন
আধুনিক ডিএসএলআর ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোয়াইট ব্যালেন্স করার ব্যবস্থা রয়েছে। এটি ছবির রঙ বুঝে এর ঔজ্জ্বলতা ঠিক করে নেয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই এই উজ্জ্বলতা ঠিক মানানসই হয় না। অর্থাৎ ফটোগ্রাফার বা ছবির কারিগর ঠিক যেভাবে চান, সেই রকমভাবে আসে না। এর জন্য ম্যানুয়ালি হোয়াইট ব্যালেন্স করিয়ে নেবার প্রয়োজন হয়।
তাছাড়া কোন ছবির ব্রাইটনেস ইফেক্ট প্রখর সুর্যালোকের মত হবে নাকি হালকা আলোয় হবে, এমন কিছু মৌলিক চাহিদার প্রয়োজনে নিজের মত করে হোয়াইট ব্যালান্স করার প্রয়োজন হয়।
অবশ্য এর জন্য খুব বাড়তি কিছুর প্রয়োজন পড়ে না, ক্যামেরা সেটিং থেকে আলোর ধরণ বুঝে বেশ কয়েকটি অপশন থেকে পছন্দমত বাছাই করে নিয়ে ছবি তোলা চলে।
৫. হোয়াইট ব্যালেন্স কাস্টমাইজেশন
হোয়াইট ব্যালেন্স অপশনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এর কাস্টম বাছাইকরণ। কাজটি সহজ হলেও অনেকেই বিষয়টি এড়িয়ে যান ফলে, ছবিতে সঠিক মাত্রার ঔজ্জ্বল্য পান না। এটি মূলত হোয়াইট ব্যালেন্স ভ্যালু, যা ছবির সঠিক শেড প্রদান করে।
উৎস থেকে ছবির সাবজেক্টে সরাসরি আলো পড়লে তা থেকে রিফ্লেকশন বা কালার নয়েজ সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যা রোধে হোয়াইট ব্যালেন্স কাস্টমাইজ করিয়ে নিতে হয়।
ফটোগ্রাফার তার সাবজেক্টে ঠিক কী রকম শেড চান এবং তার পরিপার্শ্বে কতটা হিউ চান সেই অনুপাতে ম্যানুয়ালি হোয়াইট ব্যালেন্স কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন। তাছাড়া কোন অ্যাঙ্গেল থেকে কতটা লাইট সাবজেক্টে রাখতে চান, সেটিও ঠিক করতে এই অপশন প্রয়োজন হয়।
ক্যামেরা সাধারণত নিউট্রাল লুকে ছবি যেমন দেখায় তেমনটাই প্রদর্শন করে, ফটোগ্রাফার তার চাহিদামত ব্রাইটনেস অ্যাডজাস্ট করিয়ে নিতে পারেন এই অপশনের মাধ্যমে।
৬. ব্যবহার করুন ম্যানুয়াল এক্সপোজার মোড
এক্সপোজার মোডের জন্য ক্যামেরার শাটার ও অ্যাপারচারের পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফটোগ্রাফার তাঁর ছবিতে ঠিক কতটুকু আলো এবং শেড চান, সেটা নির্ধারণ করতে এক্সপোজার টিক করতে হয়।
ম্যানুয়াল এক্সপোজার মোড ব্যবহারের মাধ্যমে ছবির সাবজেক্ট ও অবজেক্টে কতটুকু আলো পড়বে, পরিপার্শ্বের তুলনায় কতটা ব্যতিক্রম হবে সেটা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ছবির ডেপথ অব ফিল্ড এবং সাবজেক্টের চলন্ত অবস্থা কিংবা সাবজেক্ট বা অবজেক্টে ব্লার থাকবে কি না না, সেটিও সেট করতে এক্সপোজার বেছে নিতে হয়।
৭. দৈনিক অন্তত একটি ছবি পোস্ট করুন
ছবির ব্যাকরণ মেনে দৈনিক কিছু র্যান্ডম ছবি তুলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ফ্লিকার, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও পিনটারেস্টের মত সাইটে আপলোড করুন। সাথে ছবির সংক্ষিপ্ত বিবরণ জুড়ে দিন। তাতে ছবি সম্পর্কে বেশ কিছু মিথস্ক্রিয়া আসবে। এতে ছুবির ফ্রেমিং, অ্যাঙ্গেল, লাইট, শেড, অ্যাপারচারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত আসবে তাতে ভুল শুধরে আরও নিঁখুত ছবি তোলার অনুপ্রেরণা পাওয়া যাবে।
এছাড়া একই ছবি আর কতভাবে তোলা যায়, কত সৃষ্টিশীল উপায়ে ফ্রেমিং করা যায় ইত্যাদি বিষয়ের নির্দেশনাও পাওয়া সম্ভব।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবির প্রশংসা বাক্য ও বাহবা কুড়ানোর পাশাপাশি গঠনমূলক সমালোচনাও হয়, যা একজন ফটোগ্রাফারের চিন্তন শক্তিকে সমৃদ্ধ করতে খুবই কার্যকর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কমিউনিটি ও গ্রুপ রয়েছে যারা ছবি তুলে পোস্ট করে এবং ছবির খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে মন্তব্য করে থাকে। এমন গ্রুপের সাথে যুক্ত থেকে ছবি পোস্ট করার মাধ্যমে ফটোগ্রাফিক জ্ঞান বাড়িয়ে নেয়া সম্ভব। তাছাড়া কিছু কমিউনিটি বেসড গ্রুপ দিনের, সপ্তাহের, মাসের বা বছরের সেরা ছবির জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করে থাকে। ফলে একজন নবিশ ফটোগ্রাফার মুফতে এমন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে নিজের মেধা ও কাজের স্বীকৃতি এবং দক্ষতা যাচাই করতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই