সাফারি পার্কে একের পর এক প্রাণীর মৃত্যু, কমে গেছে দর্শনার্থী - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

সাফারি পার্কে একের পর এক প্রাণীর মৃত্যু, কমে গেছে দর্শনার্থী

 

সম্প্রতি জেব্রা ও বাঘের মৃত্যুর পর দর্শনার্থী কমেছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। স্বাভাবিক সময় প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ হাজার দর্শনার্থী এলেও প্রাণীর মৃত্যুর পর তা কমতে থাকে। বুধবার সারাদিন মাত্র ছয় শ’ দর্শনার্থী এসেছেন এ পার্কে। শুনশান নিরবতায় যেন চিরচেনা রূপ হারিয়েছে সাফরি পার্ক। কাউন্টার কর্মী, দোকানী ও হকাররা এক রকম অলস সময় কাটাচ্ছেন।


বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের বিভিন্ন জোনগুলোর সামনে দর্শনার্থীদের তেমন ভিড় নেই। হাতে গোনা দু’একজন পরিবার বা বন্ধু বান্ধব নিয়ে কাউন্টারে এসেছেন। বাকি সময় খোশ গল্প করে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের।


দর্শনার্থী কম থাকলেও ব্যস্ততার কমতি ছিলো না পার্ক কর্তৃপক্ষের। নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের যোগদান ও দু’জন কর্মকর্তার বিদায় উপলক্ষ্যে দিনভর ব্যস্ত ছিলেন তারা। দায়িত্ব হস্তান্তর ছাড়াও প্রয়োজনীয় কাজ বুঝে নেয়া ও দেয়ায় ব্যস্ত সময় পার করেন।


পার্কের ভেতর ‘কোর সাফারি’ (যে এলাকায় বাঘ, সিংহ, জেব্রা, জিরাফ থাকে) বিভিন্ন পয়েন্টে আলোর জন্য বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে দেখা গেছে। তাছাড়া বাঁশ দিয়ে জেব্রার পাল চড়ানোর জায়গায় নিরাপত্তা জোরদার করতে দেখা গেছে। তবে পার্কের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন ও পুরাতন কোনো কর্মকর্তাই কথা বলতে রাজি হননি।


এদিন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পার্ক পরিদর্শন করেন। এ সময় দীর্ঘক্ষণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। বৈঠক শেষে প্রাণীদের খাদ্য সংরক্ষণাগার পরিদর্শন করেন। তাছাড়া যারা জেব্রার খাবার সংগ্রহ ও বিতরণের কাজ করেন, তাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলেছেন। মৃত জেব্রাগুলোর বিভিন্ন স্যাম্পল নিয়েও কথা বলতে দেখা গেছে তাদের।


এসব স্যাম্পল কী প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা হয়েছে, তা জানতে ময়নাতদন্ত কাজে সহায়তাকারী ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলেন তারা। তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।


তারা জানান, গবেষণার কাজ শেষ হলে আইইডিসিআর থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে। এর আগে এ বিষয়ে তারা কিছুই বলতে পারবেন না।


এদিকে, বেশিরভাগ সময় দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত সাফারি পার্কে লোক সমাগম খুবই কম ছিল। বুধবার দুপুরে কোর সাফারিতে বাসগুলো দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও দর্শনার্থীর দেখা পায়নি। ময়ূর ও ধনেশ পাখির জোনে সারাদিনে মাত্র ৭৫ জন দর্শনার্থী গিয়েছেন। তাছাড়া পাখিশালা, সাফারি কিংডম, প্রজাপতি সাফরি, অর্কিড হাউস, শকুন ও পেচা কর্ণার, ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন সহ অন্যান্য জোনেও দর্শনার্থীর ভিড় চোখে পড়েনি। শিশুপার্ক অস্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। দর্শনার্থী

না থাকায় ফুডকোর্টগুলোতেও ছিল শুনশান নিরবতা।


বিভিন্ন কাউন্টারে থাকা কর্মীরা জানান, জেব্রা ও বাঘের মৃত্যুর পর দর্শনার্থী আগের মতো আসছে না। অল্প যে কয়জন আসছেন তারাও বেশিক্ষণ থাকছেন না। এর কারণ হিসেবে দর্শনার্থীরা বলছেন, সব জোনগুলো খোলা না থাকায় তারা আনন্দ পাচ্ছেন না। তাছাড়া লোক সমাগম কম থাকায় অনেকেই গভীর অরণ্যে যেতে সাহসও করছেন না।


আতাউর রহমান নামের এক দর্শনার্থী জানান, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন। কিন্তু শিশু পার্কসহ বেশিরভাগ আকর্ষণীয় প্রাণীর কাছে যেতে পারছেন না। তাই মেয়ে মন খারাপ করেছে।


ফারজানা সুলতানা নামের আরেক দর্শনার্থী জানান, অনেক মানুষ থাকলে একটা উৎসবের

মতো লাগে। এমন খালি পার্ক ভাল লাগে না।


দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় আয়ে ভাটা পড়েছে হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও। সারাদিন বসে থেকে কাঙ্ক্ষিত বিক্রি না হওয়ায় মলিন মুখেই বাড়ি ফিরেছেন তারা।


ঢাকা-ময়মনসিংস মহাসড়ক থেকে সাফারি পার্কে যাওয়ার অন্যতম বাহন অটোরিক্শা। বুধবার

সন্ধ্যায় কথা হয় এমন একজন অটো চালাক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, বাঘের

বাজার থেকে সাফারি পার্ক রুটে যাত্রী আনা নেয়া করেন। প্রতিদিন সাত শ’ থেকে এক হাজার টাকা আয় হলেও এখন তা অনেক কমে গেছে। বুধবার সারাদিনে মাত্র ৩৫০ টাকা রোজগার করেছেন তিনি।


হাসান নামের আরেকজন চালক জানান, এখন তিন শ’ থেকে চার শ’ টাকা আয় হয়। আগে সাত শ’ থেকে আট শ’ হতো নিয়মিত। আর ছুটির দিনে অনেক সময় ১৫ টাকা পর্যন্ত আয় করেছেন বলে জানান।


জানা গেছে, ২০১৩ সালে পার্ক প্রতিষ্ঠার পর দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাঘ, সাদা বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, হরিণ, ক্যাঙ্গারু, কালো ভাল্লুক, সাম্বার, গয়াল, হাতিসহ প্রচুর প্রাণী ও পাখি আনা হয়। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার ও দেশীয় বনাঞ্চল থেকে পাওয়া প্রাণী ও পাখির বেশিরভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এসেছে। গত আট বছরে সাদা সিংহ, বাঘ, জিরাফ, ক্যাঙ্গারু জেব্রাসহ দুর্লভ বেশ কিছু প্রাণী ও পাখি মারা গেছে।


সবশেষ জানুয়ারি মাসেই ১১ জেব্রা ও একটি বাঘের মৃত্যুর ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এতে দর্শনার্থীদের উপরও প্রভাব পড়েছে।

কোন মন্তব্য নেই