খাবারে ডালডা, বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

খাবারে ডালডা, বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি


খাবারের ট্রান্সফ্যাট হলো ক্ষতিকর চর্বিজাতীয় খাবার। ট্রান্সফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে ভালো কোলেস্টেরল কমায়। হৃদযন্ত্রে মাত্রাতিরিক্ত খারাপ কোলেস্টেরলের কারণে হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কের স্ট্রোক, রক্তনালীর অসুখ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিসহ নানাবিধ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।


জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ট্রান্সফ্যাটে মূলত উদ্ভিজ্জ তেল তৈরির সময় তাতে হাইড্রোজেন যুক্ত হয়। এই আংশিক হাইড্রোজেনযুক্ত উদ্ভিজ্জ তেল, যা স্বাভাবিক কম তাপমাত্রায় শক্ত হয়ে যায়, সেটিই হলো ট্রান্সফ্যাট। আবার ভেজিটেবল অয়েল বা উদ্ভিজ্জ তেল (পাম, সয়াবিন) যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পারশিয়ালি হাইড্রোজেনশন করা হলে তরল অবস্থা থেকে মাখনের মতো অর্ধ-কঠিন মারজারিন বা বনস্পতি ঘি উৎপন্ন হয়, যা বাজারে ডালডা (পিএইচও) নামে পরিচিত। এটা ট্রান্সফ্যাটের সবচেয়ে বড় উৎস।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বিশ্বের ১৫টি দেশে ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু দুই-তৃতীয়াংশ। এই তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। প্রতি বছর হৃদরোগে যত মানুষ মারা যায়, তার ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি।



ডালডা।

খাবারে ট্রান্সফ্যাটের অতিরিক্ত মাত্রা মানবদেহে ক্ষতি করতে পারে এ বিষয়ে একাধিক ভোজনরসিক জানান, খাবারে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা বা ট্রান্সফ্যাট কী সেটিই জানেন না তারা। তারা জানান, খাবারে অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট দেয় কী দেয় না সেটা খাবার যারা প্রস্তুত করে তারা বলতে পারবে। এসব খাবার আমাদের স্বাদ লাগে তাই আমরা খাই।


সম্প্রতি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট এক গবেষণায় বলেছে, ডালডা (পিএইচও) ব্র্যান্ডসমূহের মোট ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে ৯২ শতাংশ নমুনায় ডব্লিউএইচওর সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্সফ্যাটি এসিড) পাওয়া গেছে। এমনকি প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে, যা ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম নমুনায় গড়ে ১১ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে।



সেমাই।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বশির আহমেদ বলেন, ‘খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট রক্তের ধমনিতে চর্বি জমিয়ে দেয় এবং রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে ধমনিতে ব্লক তৈরি, রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। দেশে অনেক পণ্যেই বিপজ্জনক মাত্রায় ট্রান্সফ্যাট রয়েছে, যা অধিক হারে হৃদরোগ ও হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করছে।’


তবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) অতিসম্প্রতি সকল ফ্যাট, তেল এবং খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রবিধানমালা (নিয়মনীতি) প্রকাশ করেছে। প্রবিধানমালাটি দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগ ঝুঁকি কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে।


এদিকে ‘সু-স্বাস্থ্যের মূলনীতি, নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি ২০২২) পালিত হবে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস।



তেলে ভাজা খাবার।

খাদ্যে ডালডার সঠিক ব্যবহার ও খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রবিধানমালা (নিয়মনীতি) বিষয়ে একাধিক বেকারি মালিক বলেন, ‘আমরা যে ডালডা ব্যবহার করি তাতে কত শতাংশ ফ্যাট (ট্রান্সফ্যাট) থাকে সেটা আমাদের জানা নেই। এই ট্রান্সফ্যাটের এ প্রবিধিমালার বিষয়ে আমরা অধিকাংশ বেকারি মালিক কিছুই জানি না।’ 


গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে বাংলাদেশে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৪.৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। আমরা ট্রান্সফ্যাট মুক্ত নিরাপদ খাদ্য চাই। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।’

কোন মন্তব্য নেই