এটিএম বুথে লেনদেনে গ্রাহকের পকেট কাটছে ডাচ্-বাংলা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

এটিএম বুথে লেনদেনে গ্রাহকের পকেট কাটছে ডাচ্-বাংলা

 


এটিএম কার্ডের সেবার বিপরীতে বার্ষিক, দৈনিক, নেটওয়ার্ক ফি, রিসিট ফি ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফি নামে বিভিন্ন মাশুল কেটে রাখছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল)। এখন নতুন করে প্রতিটি লেনদেনের বিপরীতে মাশুল কাটছে ব্যাংকটি, যা গ্রাহকদের জানানো হয়নি। এভাবে বছরে শতকোটি টাকা গোপনেই গ্রাহকদের পকেট থেকে কেটে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।


প্রসঙ্গত, বর্তমানে এটিএম কার্ডের সংখ্যা ও বুথ বিবেচনায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকই এগিয়ে রয়েছে। ফলে কয়েক লাখ গ্রাহকের পকেট থেকে প্রতিদিনই টাকা কেটে রাখছে ব্যাংকটি, যা জানতেই পারছেন না গ্রাহক।


জানা গেছে, গ্রাহকদের নোটিস না দিয়েই এটিএম বুথ থেকে প্রতি লেনদেনেই পাঁচ টাকা করে ফি হিসেবে মাশুল কেটে রাখছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। যদিও এটিএম কার্ডের বিপরীতে প্রতিবছর নেটওয়ার্ক ফি, বার্ষিক সেবা ফিসহ অন্যান্য নামে মাশুল ঠিকই কেটে রাখছে। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা জানিয়েছেন, কোনো প্রকার নোটিস দিয়ে বা অবহিত না করেই এটিএম কার্ডে লেনদেন করলেই টাকা কেটে রাখছে ব্যাংকটি।


বিভিন্ন বুথে সরেজমিনে পরিদর্শন করে যা জানা গেছে এবং গ্রাহকরা যা জানিয়েছেন যে, নিয়ম অনুযায়ী বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের কিছুক্ষণ পরে এসএমএস আসে মোবাইল নম্বরে। এটি সাধারণ বিষয়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে তারা লক্ষ করছেন টাকা উত্তোলনের কিছু সময় পরপর বিরতি দিয়ে দুই বা তার বেশি এসএমএস আসছে মোবাইল নম্বরে। প্রথম দিকে খেয়াল না করলেও এখন দেখছেন, প্রথমবার এসএমএস আসছে টাকা উত্তোলনের। পরবর্তী এসএমএস আসছে লেনদেন ফি কেটে রাখা-সংক্রান্ত।


প্রতি লেনদেনে টাকা কেটে রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ী মো. জয়নাল হোসেন জানান, ‘আগে শুধু অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুললে সার্ভিস চার্জ কেটে রাখা হতো। এখন দেখছি ডাচ্-বাংলার নিজস্ব বুথ থেকেও টাকা তুলতে প্রতিবারই পাঁচ টাকা করে কেটে রাখছে। এটিকে লুট বললেও কম হবে না। ব্যাংকগুলো গ্রহকদের জিম্মি করে রেখেছে।’


জানা গেছে, নিজস্ব বুথ থেকে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনে নতুন নীতিমালা ও সেবা মাশুল নির্ধারণ করেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। কিন্তু তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও গ্রাহকদের তা জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বিষয়টি নজরে এসেছে ভুক্তভোগীদের।


এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহক মো. সোহানুর রহমান   বলেন, ‘এটি ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার হিসাব থেকে টাকা কেটে রাখবে, আর আমাকে জানাবে না এটি হতে পারে না। গত ৩০ জানুয়ারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা ওঠানোর পরেই লেনদেন ফি হিসেবে পাঁচ টাকা কেটে নিয়েছে। বিষয়টি ফার্স্ট ট্র্যাকে থাকা কর্মকর্তাকে জানানো হলে তিনি জানান, এটি নতুন নিয়ম করা হয়েছে। অথচ গ্রাহক হিসেবে আমি জানলামই না। ব্যাংক তো আমাকে না জানিয়ে টাকা কেটে রাখতে পারে না। এটি চুরি।’


ভুক্তভোগী আরেক গ্রহক খান এ মামুন জানান, ‘আমি একজন সচেতন গ্রাহক। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত। আমার পেশাও আর্থিক খাত নিয়ে। আমিও জানি না ডাচ্-বাংলা ব্যাংক তাদের নিজস্ব এটিএম বুথ ব্যবহার করে অর্থ উত্তোলনের নিয়মে পরিবর্তন এনেছে। লেনদেন করলেই পাঁচ টাকা করে কেটে রাখবে। ৩১ জানুয়ারি লেনদেন করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারি। এভাবে কতদিন ধরে তারা লাখ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা কেটে রাখছে, তা কেউ জানে না। আমিই জানলাম এখন। এভাবে তো ব্যাংক চলার কথা নয়। অবশ্যই তাদের একটি নীতিমালা মেনে চলতে হবে। কোনো নীতিমালা পরিবর্তন বা মাশুল-সংক্রান্ত কোনো নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই গ্রাহককে অবহিত করতে হবে। এটি না হলে বুঝতে হবে ব্যাংকের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘কোনো সেবার বিপরীতে চার্জ বা মাশুল নিতে চাইলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রাহককে অবহিত করতে হবে। এটি করতে ব্যাংক বাধ্য। শুধু অবহিতই নয়, গ্রাহককে বেছে নেয়ারও সুযোগ দিতে হবেÑতিনি সেবাটি নিবেন কি না। ব্যাংক গ্রাহককে বাধ্য করতে পারে না কোনো সেবা নিতে। এর ব্যত্যয় হওয়ার অর্থ হচ্ছে অনিয়ম। গ্রাহক ইচ্ছা করলে অন্য ব্যাংকেও যেতে পারেন। এই স্বাধীনতা গ্রাহকের রয়েছে।’


বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, যেকোনো সেবা দিতে এর বিপরীতে শর্ত ও প্রয়োজনীয় সেবা মাশুল ফি ব্যাংকগুলোকে দৃশ্যমান জায়গায় রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকের। সেবা ফি মাশুল নির্ধারণে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন থাকতে হবে। এটিকে শিডিউল অব চার্জ বলা হয় ব্যাংকিং ভাষায়। সেই চার্ট দৃশ্যমান জায়গায় টানিয়ে রাখতে হবে ব্যাংকের প্রতিটি শাখায়, যাতে গ্রাহকরা সহজেই জানতে পারেন। আর শিডিউল অব চার্জের তালিকা অনলাইনেও রাখতে হবে।ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এ শিডিউল অব চার্জের তালিকা সংগ্রহ করে দেখা যায়, গত বছরের ৬ অক্টোবরে স্বাক্ষর করা শিডিউল অব চার্জেস তালিকাটি ব্যাংকের অনলাইনে দেয়া আছে।


সেই তালিকায় উল্লেখ করা আছে, সেভিংস হিসাবের বিপরীতে ইস্যুকৃত এটিএম কার্ডের মাধ্যমে দৈনিক এক থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটি লেনদেন করা যাবে এবং মাসিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ তিন থেকে ১০বার এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে। এক্ষেত্রে লেনদেন ফি কাটা হবে না। এ সীমার অতিক্রম করে প্রতিবার টাকা তুললে প্রতিবারই পাঁচ টাকা করে লেনদেন ফি কেটে রাখা হবে।


গ্রাহককে অবহিত না করেই নতুন চার্জ কেটে রাখার বিষয়ে জানতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিনকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হয়, এসএমএস দেয়া হয়, কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ জানানো হয় মন্তব্য জানতে। প্রতিবেদক প্রধান কার্যালয়ে গেলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনো মন্তব্য করেননি।


প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা ব্যাংকটির দেশের সর্ববৃহৎ এটিএম বুথ নেটওয়ার্ক রয়েছে বলে দাবি করে থাকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এটিএম বুথ ব্যবসা থেকেই ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য আয় আসে। বর্তমানে ব্যাংকটির প্রায় পাঁচ হাজার এটিএম বুথ ও আট শতাধিক ফার্স্ট ট্র্যাক রয়েছে। ব্যাংকটি দেশের পুঁজিবাজারেও তালিকাভুক্ত।

কোন মন্তব্য নেই