ভারত নয়, পরিকল্পনায় অস্ট্রেলিয়া ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

ভারত নয়, পরিকল্পনায় অস্ট্রেলিয়া ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা


ভারতীয় কয়লা উত্তোলন ও পরিশোধনকারী কোম্পানি কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড বাংলাদেশে কয়লা রফতানির আগ্রহ দেখিয়েছে। পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানেও কয়লা রফতানি করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। তবে বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় মান বিবেচনায় ভারতীয় কয়লা ব্যবহারের সুযোগ কম বলে মনে করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগসংশ্লিষ্টরা।


তারা বলছেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উচ্চমাত্রার সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহারের সুযোগ নেই। শীর্ষ কয়লা উত্তোলনকারী দেশগুলোর মধ্যে ভারতীয় কয়লার গুণগত মান নিম্ন। তাছাড়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যেসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবেশের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।


বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে সাত হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার সাতটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বৃহৎ পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। যেগুলোয় আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে উন্নত মানের কয়লা ব্যবহার করা হবে এমন পরিকল্পনা করেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা করা হয়েছে।


বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, সেখানে হাই ক্যালরিক কোল বা উন্নত মানের কয়লা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কয়লা ব্যবহারে স্পেসিফিকেশন মান বজায় থাকবে এমন কয়লাই সেখানে ব্যবহার করা হবে।


বিশ্বে উন্নত মানের কয়লা রফতানি হিসেবে বরাবরই অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইন্দোনেশিয়াকে ভাবা হয়। এর বাইরে বৃহৎ কয়লা রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন কিংবা ভারত থাকলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কয়লার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে ভারতীয় কয়লা বাংলাদেশে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা বিতর্ক রয়েছে।


ভারতীয় কয়লা রফতানির বিষয়টি জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি আমদানির সংক্ষিপ্ত তালিকায় অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইন্দোনেশিয়াকে রাখা হয়েছে। এখানে ভারতের কয়লা রফতানির আগ্রহ থাকলেও তারা আমাদের পরিকল্পনায় নেই।


সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখন যে প্রযুক্তি মেনে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এটি করা হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থায়িত্বের বিষয়ে কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে না। তাছাড়া অত্যধিক ফ্লাই অ্যাশ কয়লায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বয়লার দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।


দেশে ভারতের কয়লা খুব বেশি ব্যবহার হয় না। এক হিসাবে দেখা গেছে, বার্ষিক মাত্র আট লাখ টন কয়লা আমদানি করা হয়। তবে বৃহৎ আকারে দেশটি থেকে কয়লা আমদানি করা হবে কিনা, সে বিষয়ে বিদ্যুত্সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কিংবা পেট্রোবাংলা কেউ সুস্পষ্ট করে বলতে পারেনি।


সাধারণত কয়লার মানের ক্ষেত্রে সালফার, ফসফরাস ও ছাই বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কয়লায় যত কম পরিমাণে সালফার, ফসফরাস ও ছাই থাকবে, সেটিকে মূলত ভালো কয়লা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লার মান যাচাই করা হয় মূলত ক্যালরিফিক মান, কার্বন ও সালফারের উপস্থিতির ওপর। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন সর্বাধিকভাবে গুরুত্ব বহন করে।


গত বছরের জুলাইয়ে ভারতীয় কয়লা আমদানির প্রতিবাদে সাত বিশিষ্ট নাগরিকের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় কয়লা পৃথিবীর সব থেকে নিম্নমানের কয়লার অন্যতম। প্রতি কেজি অস্ট্রেলীয় বা ইন্দোনেশীয় কয়লায় যেখানে ৭০ গ্রাম ফ্লাই অ্যাশ তৈরি হয়, সেখানে ভারতীয় কয়লায় ফ্লাই অ্যাশ তৈরি হয় ৩০০ গ্রাম। এছাড়া প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইন্দোনেশিয়ার ৪৫০-৫০০ গ্রাম কয়লা প্রয়োজন হয়। সেখানে ভারতীয় কয়লার প্রয়োজন হয় ৭০০ গ্রাম। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতীয় কয়লা ব্যবহার করলে সেখানে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ বেশি কয়লার প্রয়োজন হবে।


বর্তমানে পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএফপিসিএল) আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানীকৃত কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে বিশ্বব্যাংকের স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন যে মান নির্ধারণ করেছে, সেটি মেনেই এ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হচ্ছে। কয়লার মান ভালো থাকায় আগামী আট বছর দেশটির কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।


পায়রায় বিসিএলপিসিএলের উদ্যোগে আরো ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে জ্বালানি হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার কয়লা আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।


এনডব্লিউপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়ে বরাবরই গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সেক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উন্নত মানে কয়লা ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উচ্চ সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহারের পরিকল্পনা আমাদের নেই। কারণ গুণগত মানের কথা বিবেচনা করেই কয়লা আমদানি করা হচ্ছে।


বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে কয়লা রফতানির পরিকল্পনা করলেও সেটি কয়লার নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড খাপ খাবে কিনা, সেটি দেখতে হবে। আমরা বিষয়টি শুনেছি। তবে এ মুহূর্তে ভারত থেকে কয়লা আমদানির পরিকল্পনা আমাদের নেই।


বিশ্বে কয়লা উৎপাদনে চীনের পরই ভারতের অবস্থান। দেশটির কয়লার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ভারত নিজের দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি করে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা ব্যবহারের জন্য দেশটি কয়লা উত্তোলনের পর সেটি প্রক্রিয়াজাতের পর ব্যবহার করে।


কোন মন্তব্য নেই