রাজশাহীর বাজারে ভারতীয় আম - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

রাজশাহীর বাজারে ভারতীয় আম



মধু মাস আসার আগেই রাজশাহী মহানগরীর বাজারগুলোতে আগাম আম উঠতে শুরু করেছে। ফল বলতেই আম, জাম, লিচু, কলার দিকে চোখ যায়। তবে প্রথমেই আমরা আম নামটাই বলে থাকি। অর্থাৎ বাঙ্গালীর সবচেয়ে পচন্দের ফল আম। আমকে ঘিরে গ্রামের প্রান্তিক চাষি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরতে থাকে।
এ অঞ্চলের আম পেতে এখনো বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এরইমধ্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে আম। তরমুজ, আপেল, কমলা, ডালিম, আঙ্গুরের সাথে সাথে আমের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন ফল ব্যবসায়ীরা। তবে এসব আম সবই ভারতীয়। ভারত থেকে এসব আম বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে রাজশাহীর বাজারে আসছে। যদিও রাজশাহী অঞ্চলের আম গাছগুলোতে শোভা পাচ্ছে আমের গুটি।
ভারতীয় আমের রং হালকা হলুদ ও লালচে ধরনের হয়। আকারে আমগুলো বেশ ছোট। ২শ’ থেকে ২৫০ টাকায় প্রতিকেজি আম বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি গতকালই রাজশাহীতে প্রথম আম এসেছে। তবে এখনো অনেকে জানেই না বাজারে আম পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে আম পাওয়া যাচ্ছে এটাই অনেকের কাছে খুশির খবর। আমের সাথে কি আর অন্য কোনো ফলের তুলনা চলে! সেটা দেশেরই হোক না কেন। ব্যবসায়ীদের দাবি দাম বেশি হলেও বিক্রি হবে আম। আবার নতুন আম দেখে অনেকই অল্প হলেও কিনছেন।
ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় আমের স্বাদ টকমিষ্টি ধরনের। তবে ভারত থেকে প্রতি বছরই এসময় ভারতীয় আমের মধ্যে পিএম, তোতা পাখি ও গোলাপ খাস আম পাওয়া যায়। তবে এখন শুধু পিএম জাতের আম বাজারে বেশি পাওয়া যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন ফলের দোকানে বিক্রি হচ্ছে ‘ইন্ডিয়ান পিএম’ জাতের আম। তবে বাজারের সব ফলের দোকানে আম পাওয়া না গেলেও বেশ কয়েকটি দোকানে আমের দেখা মিলবে।


শুধু তাই নয়, মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জনবহুল স্থান সাহেববাজার, বাস টার্মিনাল, রেলগেট শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে ভারতীয় এই দৃষ্টিনন্দন আম পাওয়া যাচ্ছে। দু’এক দিনের মধ্যেই লক্ষ্মীপুর, দৈনিক সানশাইন চত্তর, কোর্ট বাজার ও কাদিরগঞ্জ এলাকায় আম পাওয়া যাবে।
সাহেব বাজারে এই আম কিনতে আসা ক্রেতা সোনালী ও রিমা খাতুন বলেন, ‘ফলের মধ্যে আম খেতে ভালোই লাগে। বছরের নতুন ফল, তাই একটু দাম বেশি হলেও কিনব বলে মনে করছি। প্রিয়জনকে প্রথম আমের স্বাদ দেয়াও একটা সারপ্রাইজ’। এছাড়া আমাদের দেশের আম আরো এক থেকে দেড় মাস পরে বাজারে পাওয়া যাবে। তাই আগেই ভারতীয় আমের স্বাদ নিতে চাচ্ছি। তাই আগ্রহ একটু বেশি।
নগরীর রেলগেটের ঈশান ফল ভান্ডারের মালিক মান্নু মিয়া ও তার ভাই রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশীয় আম এখনো বড় হয়নি। তাই কয়েক বছর থেকে দেশি আম বাজারে আসার আগেই ভারতীয় আম আমদানি হয়। ভারতীয় এসব জাতের আম টক মিষ্টি। আরাজান নামের আমগুলো খুবই মিষ্টি। দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে কিনেন। আজকেই বাজারে এ আমগুলো আসা। তবে ক্রেতা জানতে পারলেই বিক্রি হবে। আশা করছি কয়েকদিন পরে হলে ক্রেতার চাহিদা বাড়বে’।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় উপমহাদেশে আম কয়েক হাজার বছর ধরে চাষাবাদ চলছে, পূর্ব এশিয়াতে আমের প্রচলন হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫ম-৪র্থ শতাব্দী থেকে এবং চাষাবাদ শুরু হয় আরো পরে, খ্রিস্টাব্দ ১০ম শতাব্দী দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশ এবং পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশের পর পৃথিবীর অন্য যেসব দেশে ভারতীয় উপমহাদেশের মত জলবায়ু রয়েছে, যেমন: ব্রাজিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা মেক্সিকোতে আরো অনেক পরে আমের প্রচলন ও উৎপাদন শুরু হয়। মরোক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ১৪ শতকে আমের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত উষ্ণ প্রধান জলবায়ুর অঞ্চলে আমের চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই আম উৎপাদন হয় ভারতেই। এর পর অন্যান্য যেসব দেশ আম উৎপাদন করে তার মধ্যে আছে চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা প্রভৃতি। আম খুব উপকারী ফল।
বাংলাদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমের জন্য বিখ্যাত। ‘কানসাট আম বাজার’ বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ আম বাজার হিসেবে পরিচিত। জেলার মকিমপুর, চককির্ত্তী, লসিপুর, জালিবাগান, খানাবাগানসহ বিশেষ কিছু জায়গায় অত্যন্ত সুস্বাদু এবং চাহিদাসম্পন্ন আম পাওয়া যায়।

কোন মন্তব্য নেই